মূল্যবোধের অবক্ষয় ও বাম রাজনীতি

Posted by স্বাভিমান Labels: ,

                                                 ।। অরূপ বৈশ্য ।।

(এই লেখাটি যাদবপুর ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে শিলচরে ছাত্র মিছিলের দিনেই মিছিলের প্রতিক্রিয়ায় লেখা)

যাদবপুরে পুলিশ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একপ্রস্ত কুনাট্য হয়ে গেল। এখান থেকে ছাত্র রাজনীতি নিয়েই শুধুমাত্র নতুন প্রশ্ন উত্থাপিত হলো না, উন্মোচিত হলো সর্বস্তরে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বাস্তব চেহারা। যাদবপুরের উপাচার্য ছাত্র-বিক্ষোভকে প্রশমিত করতে নির্ভর করলেন পাশবিক রাষ্ট্রশক্তির উপর। বর্তমান লেখকের ছাত্র-রাজনীতির কিছু ঘটনার উল্লেখ শিক্ষাক্ষেত্রের শিক্ষক প্রশাসকের  মূল্যবোধের তূলনামূলক বিচার করার সহায়ক হতে পারে।

উত্তরণকালীন পর্যায়

যে ঘটনার উল্লেখ এখানে করা হচ্ছে সেই ঘটনার সময়কাল আশির দশক। অর্থাৎ এটা এমন এক সময় যখন সত্তরের দশকের বিদ্রোহী ছাত্র রাজনীতি ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে এবং উদার-অর্থনীতির জীয়ন কাঠির ছোঁয়ায় ক্যারিয়ার-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠার দিকে ছাত্র-সমাজ আকৃষ্ঠ হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই এই উত্তরণকালীন পর্যায়ে এমন কিছু সংখ্য্যক ছাত্র ছিল যারা সত্তরের বিদ্রোহী সত্তাকে বহন করে চলেছিল। বর্তমান লেখক এই বিদ্রোহী-চেতনারই একজন বাহক। এভাবে বাহক হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে জ্ঞানচর্চার অনেক ত্রুটি ও দুর্বলতা ছিল কিনা এ প্রশ্ন উঠতেই পারে এবং এধরনের প্রশ্ন বর্তমান লেখককেও ভাবিত করে। কিন্তু এই বহমানতার মধ্যে যে একধরনের মানবিক হৃদয়বৃত্তি ছিল তা অনস্বীকার্য। এই হৃদয়বৃত্তি ছাড়া মানব সমাজ মানবিক হয়ে উঠার ঈপ্সিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেত পারে না। মানব সভ্যতার বিকাশের জন্য এটাকে একমাত্র বিশেষত্ব হিসেবে ধরে নিলে নিশ্চয়ই ভুল হবে, কিন্তু এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামাজিক বিশেষত্ব। যারা মানব সমাজের স্বার্থে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে নয়, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জান বাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চান তাঁরা নিশ্চিতভাবে মহান। কিন্তু যুদ্ধ কী, কার জন্য, কাদের স্বার্থে - সেই বুদ্ধিবৃত্তিগত চর্চা ছাড়া বিভিন্ন অংশগ্রহণের মধ্যে পার্থক্যরেখা টানা যায় না। উঁচুদরের পদার্থবিদ হওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ছাত্র কডওয়েল যখন মাত্র পনেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়ে প্রথমে সাংবাদিক, কবিতা-সংস্কৃতি-পদার্থবিদ্যার লেখক হয়ে উঠেন ও পরে ফ্যাসিবিরোধী যুদ্ধে কম্যুনিস্ট সৈনিক হিসেবে অল্প বয়সেই আত্মবলিদান করেন, তাঁর প্রতি সম্মানে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়। যাইহউক, প্রারম্ভেই যে উদাহরণের মাধ্যমে সময়ের বিভাজনের সাথে মূল্যবোধের পার্থক্যরেখার কথা উল্লেখ করেছি সেখানে ফিরে আসা যাক।

সময়ের সাথে মূল্যবোধের পার্থক্য

যে কোন কারণেই হোক দুই বছরের সিনিয়র প্রার্থীকে পরাজিত করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত হই। ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা ও সিলেবাসের পাঠের প্রতি অনীহা থাকা সত্ত্বেও সময়মত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে ধর্মঘটে আগসারির ভূমিকা নিতে ছাত্র-রাজনীতির মূল্যবোধই বাধ্য করে। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকায় পরীক্ষার সময়সূচী, পাঠ্যসূচী, প্রশ্নপত্র তৈরি ইত্যাদি কোন বিষয়েই শিলচর রিজিওন্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিশেষ কোন ভূমিকা ছিল না। তাই আন্দোলনই ছিল একমাত্র হাতিয়ার এবং দাবি আদায়ের জন্য এ আন্দোলন অনেক দূর গড়াত। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রীর শিলচর সফরসূচী উপলক্ষে সার্কিট-হাউস অব্দি মিছিল করে যাওয়া হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে এ পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা করা হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্ররা জমায়েত হতে শুরু করলে মিছিল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রবেশের পক্ষে কলেজ অধ্যক্ষ সায় দেননি। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ পার হতেই মিছিলের সামনে ব্যারিক্যাড তৈরি করে পুলিশ। রাস্তা অবরূদ্ধ হয়ে যায়, ছাত্ররা রাস্তায় বসে পড়ে। সামনের সারিতে থাকা ছাত্ররা ব্যারিক্যাড ভাঙার প্রচেষ্টা করে। সেসময়ের উঁচুপদের এক পুলিশকর্তা বর্তমান লেখকের সোয়েটারের কলার ধরে টানলে বর্তমানে প্রয়াত আমাদের এক সহপাঠী যশোবন্ত দত্ত আমাকে জাপটে ধরে। পুলিশ দুজনকেই টেনে হেঁচড়ে ভ্যানে উঠিয়ে সদর থানার নিয়ে গিয়ে লক-আপে ঢুকিয়ে দেয়। সন্ধ্যার সময় আমাদের দুজনকে সসম্মানে নিয়ে যাওয়া হয় সার্কিট হাউসের একটি ঘরে। এই ঘরের বৃহৎ আকৃতির এক টেবিলের একদিকে বসে ছিলেন সবার পরিচিত বিশিষ্ট অসমীয়া বুদ্ধিজীবী ও আমাদের অধ্যক্ষ নির্মল কুমার চোধুরী ও অন্যপাশে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। টেবিলের বাকী চেয়ারে আমাদের দুজনকে বসতে বলা হয়। পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া আমার প্রিয় সোয়েটার (লণ্ডন-নিবাসী আমার এক দাদা আমাকে এটি উপহার দিয়েছিল) টেবিলের উপর রাখি। আলোচনা শেষে আমরা আবার হোষ্টেলে ফিরে যাই এবং পরদিন থেকে আন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়। আমাদের অধ্যক্ষ তাঁর নিজের ভূমিকার মাধ্যমেই ছাত্রদের সমীহ আদায় করে নেন, তারজন্য কোন নৈতিক শিক্ষার পাঠ কিংবা নিয়মের শেকল তৈরি করার প্রয়োজন পড়েনি। সত্তর দশকের শেকল ভাঙার সংস্কৃতির প্রভাব আশির প্রথম ভাগেও বিদ্যমান ছিল, তাই কোন শেকল তৈরির প্রচেষ্টাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে দেওয়ার জন্য ছাত্ররা প্রস্তুত ছিল। আশির দশক এমন এক সময় যখন ছাত্র-আন্দোলন, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, শিক্ষকের ভূমিকা সবকিছুতেই একটা বিপরীত যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, এটা এমন পর্যায় যখন ন্যায় প্রতিষ্ঠার ও বৃহদের চিন্তা এবং যেনতেনপ্রকারেণ তথাকথিত উন্নতি ও ক্ষমতা প্রাপ্তির চিন্তার টানাপোড়েনে দ্বিতীয়টির বিজয় পতাকা বাস্তবের মাটিতে প্রোথিত হতে চলেছে।

বামপন্থীদের অবস্থান

 
ন্যায়সঙ্গত ছাত্র আন্দোলনে বরাবরই বামপন্থীদের এক সদর্থক ভূমিকা ছিল। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, আত্মীয়-পরিজন বা দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে বৃহদের স্বার্থে ভাবনা ও কাজ করার অনুপ্রেরণাই ছিল এই ভূমিকার অন্তর্বস্তু। কিন্তু বামেদের এই আদর্শচ্যুতির চরম প্রকাশ ঘটতে শুরু করে আশির দশক থেকে যখন সংকীর্ণ গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা প্রকট হয়ে দেখা দিতে আরম্ভ করে। এর প্রভাব পরে সর্বত্র। এই বিচ্যুতির নগ্ন ও বিভৎস রূপে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান ও বামেদের পিছু হঠার যাত্রা প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার মধ্যে। আমাদের এওঞ্চলেও আশির দশকের বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে, এমনকি ছিয়াশির ভাষা আন্দোলনেও বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের সংকীর্ণতার নজির রয়েছে। এই বিপরীত যাত্রা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। এর ঐতিহাসিক ও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করা এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য না হলেও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা এখানে উল্লেখ করা জরুরি। পশ্চিমবঙ্গের টালমাটাল সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যে বাঙালি-মার্কসবাদ বা বাঙালি-বামপন্থার জন্ম হয় তা একদিকে পতোনোন্মুখ জমিদারি ব্যবস্থা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ব্রিটিশ ত্রাতার প্রতি আনুগত্য ও ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে আলোকপ্রাপ্ত ভদ্দরলোকদের মধ্যে একদিকে উপনিবেশিক মনস্তত্ব ও অন্যদিকে বিশ্ব-পুঁজিবাদের ছত্রছায়ায় বিকশিত নতুন শ্রেণিশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ও ইউরোপীয় রেনেসাঁ প্রভাবিত যুক্তিবাদের সাথে মার্কসবাদ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। মতাদর্শ সবসময়ই ভ্রমাত্মক। সাম্যবাদী মতাদর্শের বহিরঙ্গে লুকিয়ে থাকতে পারে জাতি-ধর্ম-বর্ণগত বৈষম্য ও ঘৃণার মানসিকতা। পশ্চিমবাংলার বাঙালি সাম্যবাদের আড়ালে এই ঘৃণার মানসিকতা ও যুক্তিবাদী অবস্থান এই দুয়ের সংমিশ্রণ বরাবরই বজায় ছিল। তাই ‘মার্কসবাদ একটি বিজ্ঞান’ – এই যান্ত্রিক ঘোষণার আড়ালে স্তালিনীয় রাশিয়ার অন্ধ অনুগামী হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রশ্ন দেখা দেয়নি। কারণ এই বিজ্ঞান চর্চায় দলীয় নেতারাই একমাত্র বিজ্ঞান শিক্ষক, মেহনতি জনগণ শুধুমাত্র এই শিক্ষকদের অন্ধ অনুগামী। জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে বৌদ্ধিক চর্চার দ্বান্দ্বিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান চর্চা ও সচতেনতা বিকশিত হওয়ার একমাত্র পথকে এভাবেই পরিহার করা হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেভাবে বৈজ্ঞানিক স্কিল ডেভেলাপম্যান্ট করা হয় বামেদের অনুসারিত পথ এর সাথে মিলে যায়। প্রাণশক্তি, সৃষ্টিশীলতা ও গণ-সচেতনতা বৃদ্ধির প্রশ্ন যেখানে উপেক্ষিত সেখানে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা অনেক বেশি অগ্রণী ও কার্যকরী ভূমিকায় অবতীর্ণ থাকায় বামেদের অস্তিত্ত্ব বিপন্ন হয়ে উঠে।

মানব প্রজাতির স্বাভাবিক প্রবণতা

প্রতিটি প্রজাতির এক একটি স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে। অসুস্থ বিপদাপন্ন পথচারীকে পাশ কাটিয়ে কোন দামী গাড়ির আরোহী দ্রুতগতিতে চলে যেতে পারেন এবং সেটাই আজকের জীবন বাস্তবতার প্রধান দিক। কিন্তু এই প্রধান দিকটি মানব প্রজাতির স্বাভাবিক প্রবণতা হতে পারে না। ভবিষ্যতের মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানব প্রজাতির বেঁচে থাকার রহস্য। এই মানব সমাজ হিসেবে বেঁচে থাকার রহস্যকে আড়াল করে রাখে সম্পত্তি সম্পর্ক। এই সম্পত্তি সম্পর্কে সে দেখতে পায় তার সন্তানকে, তার পরিবার-পরিজনকে, তার গোষ্ঠী-সম্প্রদায় ইত্যাদিকে। সম্পত্তি মালিকানা তাকে মানব প্রজাতির সদস্য হিসেবে ভাবতে অপারগ করে তুলে। সেজন্যই মার্কস বলে ছিলেন যে একমাত্র সর্বহারা শ্রমিকশ্রেণিই সবার হয়ে কথা বলতে পারে, কারণ তার হারাবার কিছু নেই। কিন্তু সবার হয়ে কথা বলার প্রশ্নটি সচেতন হয়ে উঠার জটিল প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত, সেটা বামপন্থী শিক্ষকদের ট্রেনিং ক্যাম্পে নির্ধারিত হওয়ার বিষয় নয়। সেটা বাস্তব অন্যায় ও শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামের এক প্রক্রিয়া যে বাস্তবতায় মুনাফা, আরও মুনাফা ও মুষ্ঠিমেয়র হাতে সম্পদের কেন্দ্রীভবন পৃথিবীকে করে তুলছে মানুষের বাসের অনুপযোগী। প্রতিনিয়ত মনুষ্য সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রলয়, যুদ্ধ, হানাহানি, ধ্বংসের হাত থেকে কি মানব সমাজ বাঁচতে চাইবে না? নিশ্চয়ই চাইবে, কারণ এটাই মানব প্রজাতির সাধারণ প্রবৃত্তি এবং এখানেই আশার আলো এখনও জ্বলছে। মানব প্রজাতির বেঁচে থাকার এই রহস্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বামেদের পুনরুত্থানের রহস্য। কারণ অসাম্য, লুণ্ঠন ও সম্পদের কেন্দ্রীভবনের বর্তমান ব্যবস্থার নীতিতে তথাকথিত উন্নয়ন মানেই যে ধ্বংস, বিপর্যয়, যুদ্ধ ও হানাহানি তা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। গুয়াহাটি- উত্তরাখন্ড-কাশ্মীরের বন্যা, গাজা-সিরিয়া-ইউক্রেনে মানব সংকট, চারিদিকে যুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদী উত্থান কিংবা ইংলেণ্ড থেকে স্কটল্যাণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়ার বাসনা সবকিছুই বর্তমান ব্যবস্থায় মানব সমাজের সংকটকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। সুতরাং বামপন্থী সাম্যবাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যেই মানব প্রজাতির মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র গ্যারান্টি। কিন্তু এটা তখনই সম্ভব যখন বামপন্থীরা অতীত থেকে শিক্ষা নেবে, বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব ব্যাখ্যা করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে আয়ত্ত করবে, কথা ও কাজের মধ্যে ব্যবধান ঘোচাতে সচেষ্ট হবে এবং সমস্ত দলীয় ও গোষ্ঠী সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে মানব সমাজের অগ্রগতি ও মেহনতি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির মানদণ্ডে সমস্ত ঘটনাকে বিচার করবে।

জীবনমুখী পরিবর্তন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনকে পরিস্থিতির আরেকটি বাঁক নেওয়ার সূচক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। নিষ্ক্রিয় ক্যারিয়ার সর্বস্ব ছাত্র সমাজ বোধহয় আড়মোড়া ভাঙছে, এই মোচড় আসলে সমাজের সর্বত্র বিরাজমান এক অস্থিরতার পরোক্ষ প্রভাব। অস্থিরতা পরিস্থিতির আরেকটি পরিবর্তনের লক্ষণ মাত্র। পরিস্থিতি ভালর দিক মোড় নেওয়ার জন্য যারা উদগ্রীব – তাদেরকে সক্রিয় হতেই হবে। অশুভের দাপটে শুভর বিজয় কামনা সাধারণ বুদ্ধিতে ইউটোপিয়ানই মনে হয়, কারণ এই কামনার বাস্তবায়ন জ্ঞান ও কর্মের এক সামগ্রিক জীবনমুখী পরিবর্তনের সাথে যুক্ত।     

স্বাধীনতা সন্ধানে

Posted by স্বাভিমান Labels: ,


                            ।। অরূপ বৈশ্য।।     
 যুগশঙ্খ, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

স্বাধীনতার স্পৃহা

বিষয়ের শুরুটা করছি এক ভিন্ন মাত্রা দিয়ে। সম্প্রতি একটি গল্পের বই উন্মোচনের অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতা হিসেবে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য শুনতে শুনতে আমার মনে একটি প্রশ্ন জাগে। সাহিত্য-অর্থনীতি-রাজনীতিকে কী এক অভিন্ন অবস্থান থেকে বিচার করা সম্ভব? এই সবকটিই যখন একই বাস্তবের, একই প্রকৃতির, একই মানব-সমাজের, একই গোলার্ধের ভিন্ন ভিন্ন দিক, তখন বিচারের এক সাধারণ প্যারামিটার কী খুঁজে নেওয়া সম্ভব নয়? সেই অনুষ্ঠানে বক্তারা বিভিন্ন গল্পের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দিলেন এবং কেউ কেউ এও বললেন যে একই গল্পের পাঠক-কেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের পাঠ হয়। পাঠক তার নিজস্ব অবস্থান থেকেই পাঠ নেবেন সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই যারা এই গল্পগুলো পড়েছেন তাদের মধ্যে এক সাধারণ যোগসূত্রও রয়েছে। সবারই এই গল্পগুলো ভাল লেগেছে। ভাল লাগা জন্ম দেয় একধরনের অনুভূতির যা মস্তিষ্কে সঞ্চারিত হয়ে জন্ম নেয় নতুন চিন্তার। স্যুইচ টিপে দিলে তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে বাল্ব জ্বালিয়ে দেওয়ার মত ভাল-লাগার অনুভূতি স্যুইচ টিপে দেওয়ার কাজটি সেরে নেয়। বাল্বের ক্ষমতা অনুযায়ী যেমনি আলো দেয়, ঠিক তেমনি মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনুযায়ী চিন্তার উদ্রেক হয়। সেই ক্ষমতার প্রশ্নটি এক ভিন্ন আলোচনার বিষয়। কিন্তু এই চিন্তার ভিত্তি যে অনুভূতি সেটাই তৈরি করে সাধারণ যোগসূত্র। পাঠকের মধ্যে সেই অনুভূতি লেখক তৈরি করতে পারেন শুধুমাত্র তাঁর গভীরে দেখার ও তাকে প্রকাশ করার ক্ষমতা আছে বলেই, না লেখককে তাড়িত করে তাঁর দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত অন্য কোন স্পৃহা যা ব্যতীত সাহিত্যের লেখক আর লেখক হয়ে উঠতে পারেন না। আসলে সেটাই হচ্ছে স্বাধীনতার স্পৃহা। লেখক স্বাধীন হতে চান, তাই খোঁজে দেখেন কোথায় তিনি আঁটকে আছেন। তাঁর দেখার ক্ষমতা দিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন দৃশ্য-অদৃশ্য, ব্যক্ত-অব্যক্ত, নিকট-সম্পর্কিত ও দূর-সম্পর্কিত হাজারো সম্পর্কের বাঁধন যাকে তিনি উন্মোচিত করেন পাঠকসমক্ষে। কারণ সেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির দৌড়ে তিনি একা বিফল ও ভগ্ন-মনোরথ। এর থেকে বাঁচার জন্য লেখক হয়ে উঠতে পারেন একজন সমাজকর্মীও যার সাথে তাঁর লেখক সত্ত্বার কোন বিরোধ নেই – আছে সময়ের প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন। কিন্তু এই স্বাধীনতার স্পৃহা যতদিন তার অন্তরে জাগ্রত ও প্রাধাণ্যকারী অবস্থানে বিরাজিত, ততদিনই ব্যক্তি লেখকের কাছে সাহিত্য-স্রষ্টা হিসেবে তাঁর অস্তিত্ব।

রিউ-পে ও আর্থিক সম্পর্ক

অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা হয়েছে রিউ-পে প্রকল্পের মাধ্যমে আমজনতার জন্য ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলা এবং সাথে ডেবিট কার্ড ও এক লাখ টাকার দুর্ঘটনা ইনস্যুরেন্স প্রদান। এই প্রকল্পের ঘোষিত উদ্দেশ্য এই যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আর্থিক ক্ষমতার স্বাদ পাবে, চাষীরা রক্তচোষা মহাজনী ধারের খপ্পরে পড়বে না, সবাইকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বেতন প্রদান করার ব্যবস্থা করা যাবে যা এখন মাত্র ৪% এবং ব্যাঙ্ক লেনদেন বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক সচলতা বৃদ্ধি পাবে। তবে অনেকগুলো প্রশ্ন এখানে গুরুত্ত্বপূর্ণ। ক্যাম্প করে একাউন্ট খোলার ব্যাবস্থা না হয় করা গেল, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে ব্যাঙ্ক, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ইত্যাদি কোন পরিকাঠামোই নেই, সেখানকার সাধারণ মানুষ গাঁটের কড়ি ব্যয় করে মাইলকয়েক দূরে অবস্থিত ব্যাঙ্কের সাথে সংযোগ বজায় রাখবেন কী করে? জনগণের হাতে যদি সঞ্চয় করার মত অর্থ না থাকে তাহলে একাউন্ট সচল রাখবেন কী করে? সবকিছুকে বেসরকারিকরণ করে দিয়ে সরকার উৎপাদনী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের আয় বৃদ্ধি করবে কী করে? গ্রামাঞ্চলে নতুন উৎপাদনী প্রক্রিয়া ও উৎপাদনী শক্তির বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সচলতা আনার কোন পরিকল্পনা ছাড়া ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ক্ষুদ্র লোন দিলে তা অনাদায়ে বেড-ডেট হয়ে যাবে এবং ব্যাঙ্ক এধরনের লোন দিতে উৎসাহ বোধ করবে না। বেসরকারি ব্যাঙ্ক তো আসবেই না, কারণ গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত কোন শাখাই তাদের প্রায় নেই এবং মুনাফা ছাড়া তাদের আর কোন লক্ষ্যও নেই, বরঞ্চ সাধারণের জমা অর্থ কীভাবে তাদের ব্যবসায়িক কাজে লাগানো যায় তাতে তারা উৎসাহী হয়ে উঠবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০০৯ সালের হিসেবে দেখা গেছে মোট ১৭১টি ব্যঙ্কের মধ্যে ২০টি জাতীয় ব্যঙ্ক, ৩২টি বিদেশি ব্যঙ্ক, ৮৬টি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যঙ্ক, ২২টি অন্যান্য সিডিউল ও ৪টি নন-সিডিউল ব্যাঙ্ক রয়েছে। এই ব্যঙ্কগুলির মোট ৭৯৭৩৫টি শাখা এবং শাখা প্রতি গড়  জনসংখ্যা ১৫০০০। এই শাখাগুলির মধ্যে গ্রামীণ ও আধা-শহর এবং শহর ও মেট্রোতে বিদেশি ব্যঙ্কের শাখার সংখ্যা যথাক্রমে ৮ ও ২৮৫, এসবিআই’র ১০৩৯৫ ও ৫৬৬৭, জাতীয় ব্যঙ্কের ২২০৫০ ও ১৭৩২৬, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যঙ্কের ১৪৩৭২ ও ৭৫৫ এবং অন্যান্য সিডিউল ব্যঙ্কের যথাক্রমে ৩৭৫১ ও ৫১৫৬টি। এই হিসেবে আরও দেখা যায় যে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে যেসব নতুন শাখা খুলেছে তার অধিকাংশই সেই সব অঞ্চলে যেখানে ইতিমধ্যে ব্যঙ্ক শাখা রয়েছে, এবং কিছু ব্যাঙ্কের স্বল্প সংখ্যক গ্রামীণ শাখা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।  এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যঙ্কের সুবিধে নেই, গ্রামীণ ও আধা-শহরে যা রয়েছে তার সবটিই সরকারি ব্যাঙ্ক। সেক্ষেত্রে ধরা যাক ভ্রাম্যমান ব্যাঙ্ক বা ফ্রেঞ্চাইজির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক-কাউন্টার খোলা হল। কিন্তু এইগুলিকে সচল রাখার জন্য পরিকাঠামো দরকার। তারচাইতে গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় এই যে ফ্রেঞ্চাইজির মালিকানা পাবে আর্থিকভাবে সচ্ছল স্থানীয় প্রতিপত্তিশালী লোকরা। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে সরকারি ব্যঙ্কগুলোরই, কিন্তু তারজন্য প্রয়োজনীয় আইটি-সামগ্রী সরবরাহ করে লাভবান হবে ব্যক্তিগত মালিকরা যারা জনগণের জমা অর্থ থেকে ব্যঙ্ক লোনও পাবে। ব্যবসায়িক এই নেটওয়ার্কের সবচাইতে নিচে অবস্থিত যে ফ্রেঞ্চাইজি তারাও তাদের মুনাফার জন্য সচ্ছল গ্রাহকদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে এই ফ্রেঞ্চাইজিদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে গ্রাহকরা ওয়াকিবহাল। অথচ গ্রামীণ উৎপাদনী কাজকর্ম সহ এই ব্যাঙ্কিং-এর গোটা প্রক্রিয়াকে যদি সামগ্রিকভাবে সরকারি মালিকানার অধীনে আনা যায় এবং বাংলাদেশের আদলে মোবাইল হাতে সরকারি ভ্রাম্যমান বেয়ার-ফুট গ্রাম-সেবকদের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং সুবিধা দেওয়া যায়, তাহলে সরকারি আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। সরকারি ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ও কর্ম-সংস্কৃতির প্রশ্ন দেখা দেয় তাকে দূর করা অসম্ভব কিছু নয়। তারজন্য প্রয়োজন জনগণের ক্ষমতায়ন, কাঠামোগত রক্ষাকবচ ও প্রয়োজনীয় আইন। এক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্ত্বপূর্ণ হচ্ছে এই যে  শ্রেণি-সচেতন ও পার্ফমেন্স-সচেতন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারদের কাছ থেকে বর্তমানে চালু কৃষি-লোন, তপসিলি স্কিমের লোন ইত্যাদি আদায় করতে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, নতুন একাউন্টের ক্ষেত্রে এসমস্যা হবে আরও গভীর। উপরন্তু দুর্ঘটনা বিমার ব্যয় বহন করতে সরকার উচ্চবিত্ত ও কর্পোরেটের উপর কর চাপায় না রেশন সামগ্রীর ভর্তুকি কমিয়ে গরিবের উপর বোঝা চাপায় এটাও দেখার বাকী। যেহেতু এই স্কিমের সাফল্য অন্যান্য অনেক স্কিমের মত সামগ্রীক কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভরশীল, তাই এর পরিণতি ক্রমশঃ প্রকাশ্য। কিন্তু শুরুতেই কিছু লক্ষণ দেখা গেছে যা মানুষের স্বাধীনতা স্পৃহার প্রশ্নের সাথে যুক্ত। দেশব্যাপী একাউন্ট প্রদানের প্রথম দিনে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলেও ফর্ম নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে এই ‘জিরো-ব্যালান্স’ একাউন্টের জন্য ন্যূনতম একশ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। একাউন্টে এই টাকা জমা থাকলে তো ভাল, নইলে নেপোয় মারে দৈ। কিন্তু প্রশ্ন হলো সাধারণ মানুষ জেনেশুনেই এই টাকা দিচ্ছেন, কারণ যারা অর্থ সংগ্রহ করছেন তাদের সাথে সাধারণ মানুষ এমন এক সামাজিক-আর্থিক-রাজনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ যে তারা কোন ধরনের বিবাদে যাওয়ার সাহস পান না। এই বাঁধন থেকে মুক্ত ও স্বাধীন হওয়ার স্পৃহা এতো জাগ্রত হয়নি যা তাদেরকে বিরোধিতা করার মনোবল জোগাতে পারে। অর্থাৎ এখানেও নতুন চিন্তা ও কর্মের জন্য, বঞ্চিত ও বঞ্চনাকারীর স্বাধীনতার এক আন্দোলনে যুক্ত হওয়া জরুরি।

পরিচিতি ও স্বাধীনতা

কাশ্মীর সমস্যার গণতান্ত্রিক সমাধান ছাড়া যে ভারতীয় উপ-মহাদেশে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না তা পলিটিক্যাল সায়েন্সের যে কোন ছাত্র নির্বিঘ্নে বলে দিতে পারে। কাশ্মীর সমস্যা মানে পাকিস্তান ও ভারতীয় উভয় কাশ্মীরিদের সমস্যা। রাজনৈতিক ডিসকোর্স ও মতাদর্শগত প্রচারের দৌলতে কাশ্মীরিদের সমস্যা পরিণত হয়েছে সীমা বিবাদের সমস্যা হিসেবে। এই বিবাদের সমাধানে দুই দেশই তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরিণ রাষ্ট্র নীতি ও বিদেশনীতি অনুযায়ীই ভূমিকা পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই কাশ্মীরিদের কী হবে যারা শুধুমাত্র উভয় রাষ্ট্র শক্তির সদম্ভ পদচারণায় নয়, সীমা বিবাদের সংঘর্ষেও আক্রান্ত। যে স্যাকুলার গণতান্ত্রিক কাশ্মীরি পরিচিতির আকাঙ্খার সমাধানের সূত্র খোঁজাই সমগ্র প্রচেষ্টার অন্তর্বস্তু, তারাই সেই প্রচেষ্টায় অপাঙক্তেয়। অথচ কাশ্মীরি জনগণ রুটি-কাপড়া-মোকামের জন্য বর্তমান নির্বাচনকে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু তাদের পরিচিতির আকাঙ্খাকে বিসর্জন দেননি। কাশ্মীর প্রশ্নকে অনেকে পাকিস্তান ও ভারতীয় মুসলমানের সাথে জড়িয়ে মুসলমান প্রশ্ন হিসেবে দেখেন। কিন্তু যারা কাশ্মীরি সংস্কৃতি, কাশ্মীরি জীবনযাত্রা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা এই স্যাকুলার পরিচিতিকে কুর্নিশ না করে পারেন না। কাশ্মীরের স্বাধীনতা-উত্তর দীর্ঘ লড়াইয়ে কখনও কোন দাঙ্গার নজির নেই। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দাবার বড়ে মানিয়ে ভারতীয় ও কাশ্মীরি রাজনীতিতে অনেক ছক সাজানো হয়েছে এবং তাতে পণ্ডিতদের স্বার্থই বিঘ্নিত হয়েছে। তথাপি কাশ্মীরি পণ্ডিতরা এখনও নিজেদেরকে মনে প্রাণে সেই স্যাকুলার কাশ্মীরি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গই ভাবেন। সব সমস্যার সমাধান সম্ভব যদি সমস্যাকে রাষ্ট্র শক্তির মদমত্ততায় দেখা না হয়, দেখা হয় ভুক্তভোগী মানুষের দৃষ্টি থেকে। এভাবে দেখা পথ দিয়েই সমাধান সম্ভব। পথমধ্যে অনেক ডিপ্লোম্যাসি চলতে পারে, কিন্তু শেষ বিচারে সব প্রচেষ্টাতে তারাই থাকা উচিত কেন্দ্রীয় ভূমিকায় যাদের পরিচিতির আকাঙ্খার নিস্পত্তি হবে। নাহলে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা শব্দদ্বয়ের কোন মানেই থাকে না এবং মানুষের সমস্যার কোন সমাধান হয় না। কারণ স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়।

স্বাধীনতা ও মানবিক সম্পর্ক

স্বাধীনতার বিষয়টি স্তরীভূত। একটি স্তর সরালে আরেকটি স্তর উন্মোচিত হয়। একটি বাঁধন ছিন্ন হলে, অন্য বাঁধন দৃশ্যমান হয়। কিন্তু শক্তিমত্তার দৃশ্য নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ না জানিয়ে মানুষে মানুষে সম্পর্কের মধ্যে বাজারের কেনাবেচার অদৃশ্য শক্তিকে আঘাত করা যায় না। এভাবে স্তরে স্তরে সজ্জিত স্বাধীনতার প্রশ্নকে সমাধানের মাধ্যমেই মানব সভ্যতা পৌঁছতে পারে তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে যেখানে বহুস্তরীয় ও সর্বত্র বিন্যস্ত জটিল অমানবিক সম্পর্ক প্রতিস্থাপিত হবে মানবিক সম্পর্কে।   

স্বাভিমান:SWABHIMAN Headline Animator

^ Back to Top-উপরে ফিরে আসুন