হতাশা ও আশার দ্বন্দ্ব – কল্পনা ও বাস্তবের রসায়ন

Posted by স্বাভিমান

হতাশা ও আশার দ্বন্দ্ব – কল্পনা ও বাস্তবের রসায়ন

এই লেখাটি দৈনিক যুগশঙ্খের ২৭ নভেম্বর, ২০১৩ সংখ্যায় বেরিয়েছে

বাস্তব ও ভ্রম
আমাদের চোখের সামনে বা চোখের আড়ালে যা ঘটে তার একটা ব্যাখ্যা আমরা সচরাচর খোঁজার চেষ্টা করি। কেন খুঁজি? কারণ ঘটনাটি যদি শুভ হয়, তাহলে এটা যাতে নতুন পরিস্থিতিতে – নতুন আঙিকে আবার ঘটে, আর যদি অশুভ হয় তাহলে এটার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, একে সুনিশ্চিত করার প্রয়োজনে কী বন্দোবস্ত করা যায় এর অনুসন্ধানেই আমরা ব্যাখ্যা খুঁজি। মানুষ হয়ে ওঠার এটা হচ্ছে এক স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এই ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য একমাত্রিক কোন বস্তু বা ঘটনার সাথে মিল বা সাযুজ্য দেখানোর কিছু প্রচলিত পদ্ধতির আশ্রয় সাধারণত নেওয়া হয়। এতে একই বাস্তবতার ভিন্ন ভিন্ন দিক ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে আমাদের কাছে ধরা দেয় এবং তাকেই আমরা আসল বাস্তব বলে ভ্রম করে থাকি। এই ভ্রমই সাধারণকে পরিচালিত করে বলেই সমাজ পরিবর্তনে বাস্তবকে বোঝার ক্ষেত্রে বৌদ্ধিক চর্চার গুরুত্ত্ব অপরিসীম। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, আমি যাকে বাস্তব বলে জানলাম তা যদি ভ্রম হয় তাহলে বাস্তবটা আসলে কী? বাস্তব আসলে এই সব ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে দেখা বিভিন্ন দিকের এক আন্তঃসম্পর্ক যাকে ইতিহাসের গর্ভে রেখে দেখতে হয়। এই জটিল কাজ ও সামগ্রীক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবজনিত সাম্প্রতিক কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যেই এই নিবন্ধ। বাস্তবকে এভাবে দেখা পদার্থবিদ্যার অনিশ্চয়তার সূত্রকেও মান্যতা দেয়, যে সূত্র মতে বাস্তবের অতি-নির্ধারণ (over-determination) সম্ভব নয়।

বাস্তবতা ও হতাশা
সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সাহিত্যের ভাষার ছোঁয়া থাকা কিছু বাক্যবিন্যাসের আশ্রয় নেওয়া সম্ভবত বেমানান হবে না, যদিও ডিকেন্সীয় ক্ষমতা দিয়ে রচিত বাক্যবিব্যাস একে আরও সুখপাঠ্য করে তুলত। আর্থ-সামাজিক বিষয়ের উপর নিবন্ধে সাহিত্যের বয়ান ব্যবহার করা যেহেতু সাধারণত পরিহার্য, তাই একে কোটেশনের মধ্যে রাখা হয়েছে। বয়ানটা এরকম - চ’ এগিয়ে যাই, জন্ম থেকে মৃত্যুর দিকে। আকাশে কালো ধোঁয়া, ফুসফুসে ফুটো। চারিদিকে প্রাসাদ, ভেতরে পিঁপড়ের সারি টেনে তুলছে এখান ওখান থেকে সামগ্রী, তারপর সারিবদ্ধ বহির্গমন। বাতাসের শহরে প্রবেশ নিসিদ্ধ, সারিবদ্ধ ছাদ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। চ’ এগিয়ে যাই, চারচাকায় চড়ে বাতানুকূল বদ্ধ খোপে অদৃশ্য হয়ে। নিজেকে অদৃশ্য করার সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে যায় সারিবদ্ধ ঝুপড়ির অভ্যন্তরে বাদামি আলোয় ব্যস্তসমস্ত রমণী, দাওয়ায় ন্যাংটো শিশুটির ফ্যাকাশে চোখের তলায়, কালো ঢোল উদরের আবরণে চিকচিক করা রোদের কিরণ। চ’ এগিয়ে যাই, কারণ এই অদৃশ্য যখন দৃশ্য হবে, তখন কংক্রিটের ছাদ আটকে দেবে সূর্যের কিরণ। কুছ পরোয়া নেই, চ’ এগিয়ে যাই, কারণ ওই রমণী ও তাঁর শিশুরা অন্য কোথাও গিয়ে পরিবেশ নোংরা করার দায়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমার সন্ততিরা তো যাবে দিল্লি বা বাঙ্গালোরে, আমি ফ্ল্যাট কিনব কোলকাতায় বা অন্যত্র সুরক্ষিত জায়গায়। কিন্তু ছোট ছোট শহরে দেবিমূর্তির পেছনে আমরা যখন ধর্মে মাতোয়ারা হয়ে নেচে নেচে এগিয়ে চলেছি, তখন মেট্রো শহরে আমার সন্ততিরা বিপন্ন। এই অদৃশ্য হয়ে যাওয়া লোকেদের ঘাঁটিগুলোতেই আমার সন্ততির বিপন্নতার রসদগুলো তৈরি হচ্ছে। তাই এই রসদগুলিকে দাও ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে, আর এই ঘাঁটিগুলিকে দাও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে। চ’ এভাবেই এগিয়ে যাই প্রযুক্তির উন্নয়নের সোপানে, উন্নয়ন মানে ধার করে কেনা উন্নত প্রযুক্তির যান যা সাফ করবে আমাদের ছোট শহরের পুঁতিগন্ধময় নর্দমা, বড় বড় হাঁ মেলে ফুটপাত আর পথচারীদের অত্যাচার সহ্য না করার কথা ঘোষণা করে দেবে, এ কাজ থেকে রেহাই নিয়ে সাফাইকারীরা ঘুপচিগুলিতে আশ্রয় নিয়ে গড়ে তুলবে বিপন্নতার রসদ তৈরির নতুন ঘাঁটি। এক ঘাঁটি গুড়িয়ে দিলে গড়ে ওঠে নতুন ঘাঁটি, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিলে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে নতুন রসদ। না কিছুই হবার নয়, আমরা হতাশ। ডিম লাইটের স্নিগ্ধ আলোয় আমি একা রাতের প্রহর গুনি। সামাজিকতা আটকে যায় বিবাহযোগ্য সন্তানের স্বজাতির সঙ্গী-খোঁজা সংবাদপত্রের পাতায়, ধর্মীয় মিছিলের উন্মাদনায় শহরের রাস্তায়। আমি হতাশ এই বিপন্ন সময়ের বিপন্নতায়”।

প্রব্রজন ও শহরের জনবিন্যাসে পরিবর্তন
সম্প্রতি মুম্বাই নগরির ধারাভিতে জলের পাইপলাইনের পাশের ২৪৪টি ঝুপরি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হল। এই অভিযান আরও চলবে। ১৯৯৫-এর আগে সেখানে বাস করার নথি থাকা ১২৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে, বাকীদের মাথাগোঁজার ঠাই করে দেওয়ার দায় কারুর নেই, অথচ এরাও ভারতীয় নাগরিক। দিল্লিতে ধর্ষনকারীদের ফাঁসির দাবিতে রাজপথ মুখরিত হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি জন্য ঝুপরিবাসীদের অস্তিত্বকে দায়ী করে মধ্যবিত্ত মন তার ধ্বংস কামনা করছে। কিন্তু এধরনের কোনো পদক্ষেপই যখন আমাদের বিপন্ন সময়ের বিপন্ন মানসকে রেহাই দেয় না, তখন আমাদেরকে করে তুলে হতাশ। এই হতাশা জন্ম দেয় আরও নতুন নতুন সামাজিক ব্যাধির। নিজের চোখে ধরা দেওয়া ঘটনাপ্রবাহ মধ্যবিত্ত অনুভুতির সাথে মিলে তৈরি করে এক মধিবিত্ত বাস্তবতা যার আঁচ পাওয়া যায় উপরের বর্ণণায়। কিন্তু এটাই কী সব – না বাস্তব তার চেয়ে কিছু বেশি। শুষ্ক পরিসংখ্যানের আড়ালে সামাজিক বাস্তবতায় উঁকি মেরে দেখা যাক।
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ছোট শহরগুলিতে ধর্ম-বিশ্বাসজনিত উন্মাদনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা আসলে পথ-হারানো হতাশ মধ্যবিত্তের সামাজিক হয়ে উঠার এক ব্যাধি। ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের ৫৫ তম ও ৬৬ তম রাউণ্ডের সমীক্ষার তুলনা করলে দেখা যায় যে শহরের জনসংখ্যার হার ২৫.৪% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭.০%। এই বৃদ্ধির হার আরও বেশি দেখাত যদি নতুন সেন্সাস টাউনগুলি সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হত। শহরের কলেবর যে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আঁচ করা যায় এটিএম সংখ্যা বৃদ্ধি ও এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের লাইন থেকে।  ১৯৪১-৫১ সালে ভারতের শহরের বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৪৭%। এই হার এতো বেশি হওয়ার কারণ ছিল দেশভাগের ফলে সীমান্তের দুই পারের গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে প্রব্রজন। পরবর্তীতে বৃদ্ধির হার কমে গেলেও সত্তরের দশকে এই বৃদ্ধির হার ছিল সবচাইতে বেশি, ৩.৯০%। নব্বইয়ের দশকে গ্রাম থেকে শহরে প্রব্রজন কমে যাওয়ার ফলে এই বৃদ্ধি আবার কমে গিয়ে দাঁড়ায় ২.৭২ শতাংশে। ২০০১-১১ সালে এই বৃদ্ধি ছিল ২.৭৬ শতাংশ। সমীক্ষায় দেখা গেছে নব্বই ও তার পরবর্তী পর্যায়ে এক শহর থেকে আরেক শহরে প্রব্রজন গ্রাম থেকে শহরে প্রব্রজন থেকে বেশি। গ্রাম থেকে শহরে কিংবা ছোট শহর থেকে বড় শহরে প্রব্রজিতদের অধিকাংশই চাকুরি, ব্যবসা, শিক্ষা ও দক্ষ শ্রমিকের কাজের সন্ধানকারী। দিল্লি-হরিয়ানা, দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের নতুন শিল্প-এলাকায় যে শ্রমিক আন্দোলন এখন গড়ে উঠছে তা নতুন প্রব্রজিত দক্ষ শ্রমিকের এই বিশাল বাহিনী। ভারতের বিভিন্ন শহর থেকে মেট্রো সিটিতে যাওয়া বাকীরা যুক্ত হচ্ছে মূলত সার্ভিস সেক্টরের সাথে। ছোট শহরগুলতেও মূলত ব্যবসা, চাকুরি ও সন্তানের শিক্ষার জন্য গ্রাম থেকে উঠে এসে শহরে বসত গড়ে তুলছে। কোনো কোনো অঞ্চলে যেখানে কৃষির সম্পূর্ণ বিপর্যয় ঘটে গেছে সেখানে গরিব মানুষের কাজের সন্ধানে শহরে যাওয়ার প্রবণতা থাকলেও, সাধারণভাবে গ্রামীণ গরিব মানুষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য কাজের সুযোগ তেমন নেই এবং মাথাগোঁজার জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংকুলানও নেই। পতিত বা খোলা জায়গায় যে সব হাউসিং কম্পলেক্স গড়ে উঠছে তা তাদের নাগালের বাইরে, এগুলো গড়ে উঠছে নব্য-মধ্যবিত্তদের জন্য। বরঞ্চ পুরোনো ঝুপরিবাসীদের মধ্যে যারা নতুন প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হওয়ার মত দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি, তারাই ল্যুম্পেন-প্রলেতারিয়েত হয়ে কোনমতে বাঁচার সংগ্রাম করছে। মুম্বাইর ধারাভিতে যারা উচ্ছেদ হয়েছে তারা এরকমই এক জন-সমুদায়। ধারাভি এলাকা ৫৫৭ একর জমিতে ৩ লক্ষ বাসিন্দাদের এশিয়ার সর্ববৃহৎ স্লাম-এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। কিন্তু এখন ধারাভি থেকেও বৃহৎ আরও চারটি স্লাম-এলাকা রয়েছে। মহারাষ্ট্রের কৃষি বিপর্যয়, দেনার দায়ে কৃষকের আত্মহত্যা, সুদখোর মহাজনি পুঁজির দৌরাত্মের ফলে ক্যাশ-ক্রপ এলাকাতেও সামন্তীয় সম্পর্কের দিকে পিছু হঠা ইত্যাদি ঝুপরি এলাকা বৃদ্ধির কারক। এই প্যারামিটারগুলো আরেকটি সত্যকেও দেখায় যে আমাদের মত বিদেশি বহুজাতিক বেপারিদের উপর নির্ভরশীল দেশে কৃষিতে পুঁজির অনুপ্রবেশ জমির মালিকানাভিত্তিক সামন্তীয় সামাজিক সম্পর্ককে খানিকটা ভাঙলেও তা আবার সংকট মুহূর্তে উল্টোদিকে ঘুরে যেতে পারে এবং র‍্যান্টিয়ার-ফিনান্স পুঁজি ও মার্কস বর্ণিত “অ্যাবসলুট গ্রাউন্ড রেন্টের” প্রাধান্য বলবৎ হতে পারে। সে যাইহউক, এধরনের ব্যাতিক্রম বাদ দিলে ও উপরের পরিসংখ্যান ও প্রব্রজনের প্রবণতাকে বিবেচনায় রাখলে, আমাদের গ্রামাঞ্চলে কারা পড়ে রইলেন? যারা পড়ে রইলেন তাদের সাধারণ অবস্থার স্বরূপটা কী?

আমাদের  দেখা বরাকের গ্রামাঞ্চল
বড় জমির মালিকরা তাদের রায়তদের কাছ থকে আর খাজনা পান না। রেকর্ড অব রাইটস না থাকলেও রায়তরা নিজেরাই এখন বকলমে জমির মালিক। বড় জমির মালিকদের পরিবার-পরিজনরা শহরে চলে এসেছেন। ঠিকাদার, ব্যবসায়ীরা ছাড়া চাকুরিজীবীদের বড় অংশ শহরমুখীন, যারা এখনও শহরে আসেননি তারাও শহরে ফ্ল্যাটবাড়ি বা একফালি জমি কিনে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন। পুরোনো রায়তরা এখন জমির মালিক হলেও নিজের জমি নিজেই চাষ করেন, কিন্তু তাতে পরিবারের ভরণ-পোষণ চালানো যায় না বলে চাষের মরশুম ছাড়া (বেশির ভাগ জমি এক-ফসলি, কোথাও কোথাও দু-ফসলি) বাকি সময় তারা বিভিন্ন ধরনের মজুরি শ্রম করেন। অর্থাৎ কৃষির ক্ষেত্রে তারা একই সাথে উৎপাদনের উপকরণের মালিক ছোট কিংবা মাঝারি কৃষক এবং নিজের জমির শ্রমিক এবং বছরের অন্য সময় পুরোপুরি মজুরি-শ্রমিক। বর্তমানে প্রায় সমস্ত ধানের কৃষি জমিতে ট্র্যাক্টর ব্যবহৃত হলেও জলসেচের অভাব ও বৃহদাকারের কৃষি-ফার্ম না থাকায় ধানের মত কৃষি-উৎপাদ বাজারের বিনিময়ে আসে কম। অর্থনীতিবিদ উৎসা পট্টনায়েক যেমন দেখিয়েছেন মাঝারি থেকে বৃহদাকারের কৃষিজমি থেকে ২০% থেকে ৬৩% পর্যন্ত ফসল বাজারে আসে, সেটা বরাক উপত্যকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এখানে সরকারি ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনারও বিশেষ কোনো বন্দোবস্ত নেই। অর্থনীতিবিদ অমিত ভাদুরি ফসল উৎপাদনের আগাম ধার দিয়ে ক্ষুদ্র চাষিদের বাজারের চাহিদা নির্ভর বিক্রয় থেকে বিরত রাখার যে পদ্ধতির কথা বলেছেন সেটাও এখানে প্রযোজ্য নয়, কারণ এখানের বৃহৎ জমি মালিকরা ফসলের বিনিময়ে চাষের জন্য আগাম ধার দিতে আগ্রহী নয়। বরাকের গ্রামাঞ্চলে এখন নগদ অর্থমূল্যে ব্যক্তিগত মহাজনি সুদি-ব্যবসার সাথে সাথে চড়া সুদের হারে মানি-মার্কেটিং সিস্টেমে ইনভেস্টাররা মুনাফার মাধ্যমে শ্রমের উদ্বৃত্ত শুষে নেয়। বরাকের গ্রামাঞ্চলে এই ব্যাপক শ্রমিকরা বছরের বড় অংশ জুড়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্প, ক্ষুদ্র শিল্প,নানধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সাথে বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক হিসেবে যুক্ত। এক্ষেত্রে যেমন রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি পুঁজির অনুপ্রবেশ রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক – আইএমএফ ইত্যাদির মাধ্যমে বহুজাতিক পুঁজিরও অনুপ্রবেশ। এই পুঁজির এক বড় অংশ পরিকাঠামোগত নির্মাণে বিনিয়োগ হচ্ছে। নব্বই পরবর্তী কাঠামোগত পুর্গঠন প্রক্রিয়ায় শহর ও আধা-শহরগুলির যে কলেবর বৃদ্ধি হয়েছে এবং সমাজের উপরতলার একাংশের আয় বৃদ্ধি হয়েছে তাতে সার্ভিসিং-রিপেয়ারিং-কনস্ট্রাকশন-ট্রান্সপোর্টেশন ইত্যাদি ধরনের কাজও বৃদ্ধি হয়েছে। এই কাজগুলিতে মূলত শহর ও আধা-শহরের পার্শ্ববর্তী কৃষি-অঞ্চলের বাসিন্দা ও শহরের পুরোনো ঝুপরিবাসীদের অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা ও শ্রমের সাথে যুক্ত হয়েছে, ফলে শহরগুলির আয়তনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব্জি-চাষ এঅঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের এক লাভদায়ক ফলন হলেও (চাহিদার তুলনায় ফলন কম হওয়া লাভদায়ক হওয়ার একটি কারণ), যেহেতু এই চাষ নদির তীরবর্তী জমি ছাড়া অন্য কোথাও প্রায় হয় না এবং এই চাষ শুধু শীতের দু-তিন মাসই হয়, তাই এই চাষের সাথে যুক্ত কৃষকের সংখ্যা খুব কম। এধরনের আরও কিছু ফসল রয়েছে যেমন বড় মাপের জমিতে সুপারির চাষ, রাবার চাষ ইত্যাদি, এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কোয়ারি। বাংলাদেশের সাথে বরাকের সুপারির ব্যবসা পুরোনো, সেদিক থেকে রাবার চাষ নতুন। এই চাষের জমির মালিকরা জমি লিজ দিলে ভাড়া হিসেবে যে আয় তাদের হতে পারত তার পরিমাণকে জমিতে পুঁজি বিনিয়োগ থেকে  মুনাফার সাথে যুক্ত করে দেখেন, অতিরিক্ত মুনাফা শ্রমিকের উপর কম ব্যয় করে বা কম হাজিরা দিয়েই করতে চান। একই নিয়ম চা-বাগান মালিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা জমিতে লিজের মালিক হয়ে নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে জমির ও শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে মুনাফা বৃদ্ধির পদ্ধতির চেয়ে শ্রমিকের জন্য ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট। উপরন্তু এই ধরনের সামগ্রীর ক্ষেত্রে একটা সর্বভারতীয় বা আন্তর্জাতিক মার্কেটিং-চেইনের মধ্যে কাজ করতে হয় বলে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা থাকে না।  
গ্রামাঞ্চলে যে নতুন শ্রমিকবাহিনীর জন্ম হয়েছে তাদের একটা বড় অংশ একইসাথে জমির সাথে ও জাতি-বর্ণগত শ্রম-বিভাজনের নিয়মের সাথে যুক্ত। তাঁরা জমি ও জাত-বর্ণের বন্ধন থেকে ছিন্ন হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন শ্রমিকে রূপান্তরিত হয়নি। কিন্তু তাঁরা অত্যন্ত কম মজুরিতে কাজ করে কোনমতে তাদের পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রামে লিপ্ত। তাই তাদের কাছে মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্নগুলি এক গুরুত্ত্বপূর্ণ প্রশ্ন। গ্রামাঞ্চলে সৃষ্ট হওয়া ভূমিহীন ও ভূমিমালিক এই বিশাল শ্রমিকবাহিনীই নয়া-গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করার বস্তুগত ভিত্তি। এই শ্রমিকরা ও নতুন শিল্পশ্রমিক ও সার্ভিস সেক্টরের শ্রমিকরা শ্রমশক্তির মূল্যের নিচে ও ওপরে বিভিন্ন মাত্রার হাজিরা পায় এবং এর সাথে জাতি-বর্ণ ও জনগোষ্ঠীগত স্তরীভূত বিভাজনের একটা সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু এই বিভাজনে যে অনেকখানি নমনীয়তা এসেছে তা টের পাওয়া যায় যখন গ্রামাঞ্চলে সামাজিকভাবে আধিপত্যকারী জাতি-বর্ণের লোকদেরকেও এনরেগার কাজে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়, যদিও সামাজিক সংযোগকে ব্যবহার করে কাজ না করেও মজুরির একাংশ আদায় করে নেওয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যেই বেশি। তথাপি এই শ্রমিকরাই সমাজ-পরিবর্তনের বস্তুগত ভিত্তি এবং এই ভিত্তি যদি জাগ্রত হয় ও  তার সাথে শ্রমিকশ্রেণির আদর্শ বহন করার শক্তি দিল্লি-হরিয়ানা বা দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের মত নতুন শিল্পাঞ্চলের নতুন শ্রমিকরা ও সার্ভিস সেক্টরের নতুন শহরের শ্রমিকরা যদি জেগে ওঠে তাদের সাথে হাত মেলায়, তাহলে যে আশার আলো দেখা দেবে তাতেই মধ্যবিত্তের হতাশার বাতাবরণ কাটবে ও তারা সৃষ্টিশীল কাজে লিপ্ত হবে।

জাগরণের শর্ত ও দ্বন্দ্বের মীমাংসা
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র-নায়ক ও বহুজাতিক বৃহৎ পুঁজিমালিকরা বর্তমান নিও-লিব্যারেল অর্থনীতির ও ব্যবস্থার সংকট থেকে পরিত্রাণের কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছেন না। একদিকে বিকাশ বজায় রাখা, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও অসাম্যের মোকাবিলা করা – এ দুয়ের নাগপাশ থেকে বেরোনোর কোনো প্রেসস্ক্রিপশন এই নিও-লিব্যারেল অর্থনীতিতে নেই। বরঞ্চ তাদের তথাকথিত বিশ্বায়নের বিপরীতে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগী হিসেবে বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মোর্চা গড়ে তুলছেন। ব্রাজিল-রাশিয়া-ভারত-চীন ইত্যাদি ব্রিক (BRIC   ) দেশগুলি সামরিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য একত্রিত হয়েছে। এধরনের বিভিন্ন মেরুকরণ আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রমাগত ক্ষমতার কেন্দ্রীয় বিন্যাসকে পরিবর্তিত করছে। অভ্যন্তরিণ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকছে। বিশ্ব তথা দেশের শ্রমিকরা কি এই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহারে জেগে উঠবে না? উত্তর সম্ভবত ইতিবাচক। নবজাগরণের এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে বৌদ্ধিক ও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে নতুন বামপন্থী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ জরুরি। নতুন বাস্তবতায় নতুন চিন্তা ও কাজ হতাশার বিপরীতে বাস্তবের আশার দিকটিকে উজ্জ্বল করে তুলতে পারে ও সমাজের অভ্যন্তরে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে পারে। কল্পনা ও বাস্তবের রসায়নের মধ্যেই আশা ও হতাশার দ্বন্দ্বের মীমাংসা লুকিয়ে আছে।  
             

অরুণোদয়: অক্টোবর , ২০১৩ সংখ্যা

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , ,

'অরুণোদয়' শিলচর শহরের প্রাচীন পত্রিকাগুলোর একটি। ৬৪ বছর বয়স এর। এককালে সম্পাদনা করতেন, সুনীল দত্তরায়, তখন এটি সাধারণ ভাবে বরাক উপত্যকার মধ্যবিত্ত বাঙালির  এক অন্যতম মুখপত্র ছিল বললে ভুল হবে না। শিলচর প্রেমতলার অরুণোদয় কার্যালয়, এখন যেখানে সানগ্রাফিক্স, এবং যে সানগ্রাফিক্সে এখনো উপত্যকার বহু গুরুত্বপূর্ণ বই, পত্রিকা ছাপা হয়, এমন কি এই অরুণোদয়ও --সেটি  তখন শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধিক আড্ডাও ছিল। ছিল বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলীরও সাক্ষী। এখনো সানগ্রাফিস্ক তাই আছে। কিন্তু অরুণোদয়ের সঙ্গে সানগ্রাফিক্সের আগে কোন সম্পর্ক ছিল না, এখনো ছাপানোর বাণিজ্যিক সম্পর্কের বেশি কিছু নেই । গেল শতকের নব্বুইর দশকে এর মালিকানা কিনে নেন চন্দন সেনগুপ্ত। এখন তিনিই সম্পাদক।  আগে এটি সাপ্তাহিক কাগজ ছিল, এখন মাসিক। এখন এটি নির্দিষ্টভাবেই মধ্যবিত্ত ছাড়াও, দলিত বঞ্চিত আদিবাসী, সংখ্যালঘু , মেহনতি মানুষের মুখপত্র। আমাদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল, একে আন্তর্জালে উপস্থিত করবার। আজ অক্টোবর, ২০১৩ সংখ্যা থেকে সেটি সম্ভব হলো বলে ভালো লাগছে। প্রদেশ এবং দেশ-বিদেশের নিয়মিত সংবাদ এবং প্রতিবেদন ছাড়াও, আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে,
অরূপ বৈশ্যের লেখাঃ চা-বাগানের মূল বাসিন্দাদের মর্মবেদনা।
সন্তোষ রাণারঃ খাদ্য নিরাপত্তা এবং  জমি অধিগ্রহণ আইন প্রসঙ্গে।
মৃন্ময় দেবেরঃ সন্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চঃ  প্রত্যাশা এবং সম্ভাবনা।
শৈলেন দাসেরঃ বরাক উপত্যকার কৈবর্ত সমাজের আর্থসামাজিক অবস্থান।
আপনি নিচে পুরো কাগজটাই পড়তে পারেন। ইচ্ছে করে এখানেই কম্পিউটারে বড় করে, বা নামিয়ে নিয়ে। আপনার শুধু এডোব ফ্লাস প্লেয়ার দরকার পড়তে পারে, সেটি এখান থেকে নামিয়ে নিন।  পিডিএফ -টি সামান্য  দুর্বল বলে কিছু বর্ণ ভেঙ্গে গেছে, কিন্তু তাতে কাগজটি পড়তে তেমন কোন অসুবিধে হবে বলে মনে হচ্ছে না।


Rallies Of Unorganized Sector Workers at three districts of Barak Valley - A brief report from President, Manas Das

Posted by স্বাভিমান

Rallies Of Unorganized Sector Workers

 Formation   Of   Asom   State Council   Of    NTUI


Asom Mojuri Shramik Union,the organization of downtrodden workers of unorganized sectors, has organized three consecutive rallies at the District Headquarters of Barak Valley ---- Karimganj, Hailakandi and Silchar on 6th, 7th & 8th September,2013 respectively. As the Union is affiliated to New Trade Union Initiative (NTUI), the All India Secretary Comrade Gautam Modi from New Delhi attended the Convention and delivered speeches at Hailakandi and Silchar rallies.  
He has given a vivid idea on the background of formation of NTUI.  It was, indeed, necessary to form an independent Trade Union forum at this juncture when most of the Trade Unions are catering the needs of respective political parties only. While
discussing about the political scenario vis-à-vis struggle of working class in the country, he pointed out the different movements of working class and toiling masses over the world.  The President of Paschimbanga Cha Shramik Karmachari Union & a renowned leftist intellectual Comrade Vaskar Nandy
has highlighted the wretched condition of workers in Tea Gardens, in different Industrial Sectors and peasantry. He also spoke on the adverse effects of neo-liberal economic policy adopted in the country and the heinous conspiracy  of  imperialism throughout the world.  Comrade Robson
Munda, President of Bagicha Shramik Sangstha has put forward his deliberation in ‘Sadri’, the mother tongue of most of the Tea Garden workers of the Valley, which was hailed by them. He reiterated for a united movement of Barak and Brahmaputra Valley Tea Garden workers to
make a better living condition and also to uplift the great cultural heritage as well as provision of educational facilities in respective mother tongue. Both Comrades Nandy and Munda delivered their speeches in all the three meetings.  Comrade   
Press Statement issued by Manas Das
Dr. Abu Taher, President Asom-Arunachal Pradesh Petroleum Workers’ Union has delivered at Hailakandi and Silchar. While discussing on the necessity of united movement of the working class, he sung a few songs on unity of the masses. Comrade Dr. Devabrata Sharma, Co-ordinator,

Preparatory   Committee of  Asom State Council of  NTUI during his speech at Silchar briefed how the people of Asom in general and working class in particular are fighting against the chauvinist forces as well. Members of the Union have participated the rallies from far off villages of the valley with
great zeal and impetus. Followed by meetings processions were taken out with placards and banners at all the three towns and moved through different streets by raising voices with slogans.
The meetings at District Library, Karimganj; Nazrul Sadan, Hailakandi & Narsingtola Math, Silchar were presided over by the Chairperson, Nari Mukti
Sangstha retired Vice Principal Comrade Mandira Nandi; Hailakandi District Committee President of Union Comrade   Dakshina Mohan Das & Comrade Mrinal Kanti Shome, President, Cachar District Committee of Union  respectively.
Quite a good number of Local Leaders and
Advisers of Asom Mojuri Shramik Union, other Trade  Unions and  Social Activists of  Barak  Valley spoke on the occasion. Among those are Advocate Subrata Paul, Sishir Dey, Samsul Huda, Md. Abdur Rahman, Jamal Uddin, Abdul Kalam, Manowara Begum, Tinku Gupta, Altaf Khan, Advocate Nekibul Hussain Choudhury, Advocate Najmul Hussain, Advocate Abdul
Haque, Mukta Nath, Parvez Khasru Laskar, Advocate Nazrul Islam Majharbhuiyan, Kajal Demta, Hema Dube and Dharitri Sharma.
In the evening of 8th September Delegate Session held at ShreeMa Bhavan, Silchar. The delegates from Asom Mojuri Shramik Union, Bagicha Shramik
Sangstha, Asom-Arunachal Pradesh Petroleum Workers’ Union, Construction Labour Union, Bongaigaon, Casual & Construction Workers’ Union, Bongaigaon were participated. The session initiated by Comrade Sishir Dey, Zonal Secretary, Asom Mojuri Shramik Union, Barak Valley Committee with a declaration of Presidium, consists of Comrades

Chandradhar Kalita, Robson Munda, Jagat Sinha, Abu Taher, Dakshina Mohan Das, Mrinal Kanti Shome & Samaresh Dey. Comrades Biswajit Das and Abu Taher’s inaugural songs inspired the 100 odd delegates participated the session.
Comrade Gautam Modi highlighted that
NTUI has formed with a sole intention to organize the members of unorganized and organized sectors to fight out the onslaughts of Managements and Government nexus on the working class, also to raise demands for better living conditions, minimum wage for livelihood etc. and to fight out the partisan
 concept of Trade Unionism. Though a left orientation is prevailing in the core activities of the NTUI, it has extended for a broader unity amongst the working class to usher a new dimension in Trade Union activities. Com. Modi also discussed about the coming General Assembly of NTUI to be held at industrial city Aluva in Jerala on 19th - 21st November, 2013 and International Conference on 22nd – 23rd November, 2013, where the Delegates and Observers are to attend proportionately according to the membership strength of the Unions affiliated to NTUI. Com. Vaskar Nandy also put forward supplementary information regarding the General Assembly and asked to prepare for attending the same at Aluva to strengthen the unity amongst working class of the country. Com. Devabrata Sharma narrated about the formation of Preparatory Committee of NTUI Asom State Council, which was held on 14th July in Guwahati and decisions thereon.  .                                              
In the Delegate Session Comrades Narayan Gogoi, Kiran Tanti, Abul Husain, Bhadreswar Saikia, Dharitri Sharma, Abu Taher, Samaresh Dey, Altaf Khan and others from different districts of Asom delivered. During reporting they gave an impression of activities of the Union in their area of works and in other peripheries, which encouraged the Delegates to a great extent.
The Delegate Session culminated with the formation of Asom State Council of NTUI with the following Office Bearers and Executive Committee Members:
President- Com Manas Das, Vice-President- Com. Robson Munda, Com. Abu Taher, Com. Altaf Khan, Secretary - Com. Devabrata Sharma, Assistant Secretary -  Com. Sishir Dey, Com. Kiran Tanti, Com. Abul Hussain                                         Executive Members -  Com. Chandradhar Kalita, Com. Dharitri Sharma, Com. Motin    Roy, Com. Probodh Buragohain, Com. Sopon Bora, Com. Arup Baisya, Com. Chandan Roy, Com. Narayan Gogoi, Com Bhadreswar Saikia, Com. Diganta Sharma, Com. Parvez Khasru Laskar, Com. Bindu Gunju, Com. Mrinal Kanti Shome, Com. Keshab Dutta, Com. Bipul Hazarika, Com. Manowara Begum, Com. Samaresh Dey.

It is decided that in future, some more members will be co-opted in the committee. It has also been decided that proportionate number of Delegates and Observers will attend the General Assembly at Aluva from different affiliates of NTUI from Asom. 

দামামাঃ অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের একটি মাসিক প্রকাশনা। এখানে নিয়মিত পড়তে পাবেন। এবারে অক্টোবর,২০১৩ সংখ্যা।

Posted by স্বাভিমান


দামামাঃ অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের একটি মাসিক প্রকাশনা। এখানে নিয়মিত পড়তে পাবেন। এবারে অক্টোবর,২০১৩ সংখ্যা।


মুজাফফর নগরের সাম্প্রদায়িক সংঘাতঃ একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ

Posted by স্বাভিমান Labels: , , , ,


 ( লেখাটি ৩ নভেম্বর, ২০১৩ সংখ্যা সাময়িক প্রসঙ্গে বেরিয়েছে)
  
সংঘাতের বৈশিষ্ট্য
মাদের নিজ রাজ্য আসামের পশ্চিম প্রান্তে জনগোষ্ঠীগত অশান্তি লেগেই আছে। সেখানে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে উত্তর প্রদেশের পশ্চিম প্রান্তের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মনোনিবেশ করা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করতে পারেন। তাই মুজফফরনগরের ঘটনাপ্রবাহের যথাযথ গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এর একটা ব্যাখ্যা শুরুতেই দেওয়া জরুরি। উত্তর প্রদেশের পশ্চিম প্রান্তের মুজাফফরনগর সহ অন্যান্য জেলা ‘সুগার বেল্ট’ বা চিনিকলের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিগণিত, শুধুমাত্র মুজফফরনগর জেলাতেই ১১টি চিনিকল রয়েছে। অন্যদিকে নিম্ন আসাম হিসেবে পরিচিত আসামের পশ্চিমাঞ্চল অনুন্নত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সামন্তীয় এবং অর্ধ-জনজাতীয় পরিচিতির সম্পর্কে আবদ্ধ গোষ্ঠীগত চেতনার প্রাধান্যকে ব্যবহার করে সংকীর্ণ স্বার্থের যে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা সম্ভব, শিল্পাঞ্চলের সামাজিক সম্পর্কে সেই ফাটল সৃষ্টি করা সহজ নয় বলেই চালু ধারণা রয়েছে। অথচ সেখানেই এমন এক বড় মাপের সংঘাত হল যে প্রায় ৫০ জন নিহত ও প্রায় ৫০ হাজার লোককে গৃহহীন হয়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিতে হল। নিহত ও গৃহহীন লোকেদের প্রায় সবাই যে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত তা সরকারি-বেসরকারি সব সূত্রের ভাষ্য থেকেই স্পষ্ট। মিরাট, ভাগলপুর, ভিওয়ান্দি ইত্যাদি অঞ্চলের মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সাথে এই দাঙ্গার কিছু চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে। কারণ উল্লিখিত অঞ্চলগুলিতে যে বিশেষ পারিবারিক ও ক্ষুদ্র শিল্প ধীরে ধীরে প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কারখানায় বিকশিত হচ্ছিল সেগুলিতে মালিক ও শ্রমিক উভয়ই ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। অন্যদিকে মুজফফরনগর ও পার্শ্ববর্তী জেলায় মুসলিমরা মূলত দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক। সাধারণত কোনো জনগোষ্ঠীর উপর আক্রমণের পেছনে নির্দ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে অবদমিত করে রাখা একটি সচেতন বা অচেতন উদ্দেশ্য হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকে। ভিন্ন আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় নিম্ন আসামের অ-বড়ো জনগোষ্ঠীরাও এধরনেরই আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রতিটি জনগোষ্ঠীগত সংঘাতের আলাদা আলাদা স্থানিক বৈশিষ্ট্য ও কারণ থাকে, কিন্তু সবগুলিই ঘটে এক বিশেষ সময়ের সামগ্রিক আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবে। স্থানিক না সামগ্রিক কারণ কোনটা প্রাধান্যকারী অবস্থায় রয়েছে তা আমাদের বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে আবিষ্কার করতে হয়। মুজফফরনগরের সংঘর্ষের ঘটনায় মুসলিম শ্রমজীবী মানুষকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে নেওয়ার পেছনে বিশ্বায়ন তথা আশির দশক থেকে চালু নয়া-উদারবাদী অর্থনীতি যে বিত্তপুঁজি নিয়ন্ত্রিত বাজারশক্তির দৈত্যকে বোতল থেকে বের করে এনেছে তার প্রভাব প্রধান্যকারী ভূমিকায় রয়েছে। এই নতুন দিকটি যা এই দাঙ্গার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়েছে তার একটা ব্যাখ্যা তুলে ধরার জন্যই এই নিবন্ধের অবতারণা।

ঘটনার সূত্রপাত ও জনগোষ্ঠীগত ঐক্য
        ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ভিন সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে কুরুচিপূর্ণ যৌন-মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। ২০১৪-এর নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগোষ্ঠীগত সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে এই ঘটনাকে একটি পরিপূর্ণ সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপান্তরের জন্য রঙ-বেরঙের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কেউ কেউ নীরবে অপেক্ষা করতে থাকে, আবার অনেকে তাতে সরাসরি ইন্ধন যোগায়। অথচ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং-এর মৃত্যুকাল অর্থাৎ ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে জাঠ ও মুসলিমদের এক ঐক্য গড়ে উঠেছিল। নির্বাচনী দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঐক্য উভয় সম্প্রদায়ের জন্যই লাভদায়ক ছিল। ইউপি’র পশিমাঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩৩% এবং ফলে চৌধুরী চরণ সিং-এর নেতৃত্বে এই ঐক্যে জাঠদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি যেমনি অনেকগুণ বেড়েছিল, ঠিক তেমনি এই ঐক্যের জেরেই ২০১২-এর বিধানসভা নির্বাচনে ২৬ জন মুসলিম প্রার্থী জয়লাভ করেছিল। ২০০৬-এর সাচার কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী নির্মাণ শিল্পে, কারখানা ও বাণিজ্যে শ্রমিক হিসেবে মুসলিমদের অংশীদারি কৃষিক্ষেত্র থেকে অনেক বেশি। ফল বাগান ও ফলের ব্যবসায় অ-শ্রমিক মুসলিমদের একাধিপত্য রয়েছে। অন্যদিকে অবিসি জাঠ সম্প্রদায় মূলত জমির মালিক ও আখ চাষি। মুজফফরনগরের ঘটনা মুসলিম-জাঠ ঐক্যেই শুধু ফাটল ধরায় নি, মেহনতি মানুষের এক নতুন ঐক্যের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

শ্রমজীবীদের ঐক্য ও জনগোষ্ঠীগত দূরত্ব
          বিগত দিনগুলিতে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং বিভিন্ন নতুন সার্ভিস ও কনস্ট্রাকশন সেক্টরে দক্ষ  ও অদক্ষ শ্রমিকের নিয়োগের ফলে মুসলিম শ্রমিকদের শ্রেণিগত ক্ষমতা খানিকটা বৃদ্ধি ঘটে। অন্যদিকে চিনি উৎপাদনের কারখানায় দেখা দেওয়া মন্দার শিকার হয় জাঠ চাষিরা। চিনিকল মালিকদের থেকে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা চাষীদের প্রাপ্য। এই অর্থ অনাদায়ে জাঠ জমিমালিক ও চাষিদের বাস্তব অবস্থার অবনতি ঘটে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার তুলনামূলক বিচারে জাঠদের অবস্থান মুসলিমদের চেয়ে অনেক উন্নত হলেও, বিগত বছরগুলিতে উভয় সম্প্রদায়ের আর্থিক স্বচ্ছলতার বিপরীতমুখী গতি জাঠদের মধ্যে এক মনোবিকারের জন্ম দেয়। দুই সম্প্রদায়ের আর্থিক অবস্থানের ফারাক কমে আসার বাস্তব প্রেক্ষিতে পুরোনো নির্বাচনী ঐক্যকে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যের এক নতুন মাত্রা দেওয়া যেত। কিন্তু প্রগতিশীল শক্তির অনুপস্থিতিতে বিষয়ীগত এই বাস্তবতাকে প্রগতিশীল আন্দোলনের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না, বরঞ্চ মনস্তাত্ত্বিক চাপের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে পুরোনো ঐক্যকে ভেঙে দিতে সমর্থ হল প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি।

চিনি উৎপাদন ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষির বাণিজ্যিকিকরণ
           ১৮২০ সালে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী ভারতে প্রথম চিনি উৎপাদন চালু করে। বেনারসের হলুদ চিনি ইংল্যাণ্ডের কারখানায় পরিশোধিত করে কোম্পানী বাজারজাত করত। কিন্তু ১৮৪৬ সালের ব্রিটিশ শুল্ক নীতির বলি হয়ে ব্রিটিশ কারখনার রসদ হিসেবে ভারতীয় চিনি প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকতে পারে না এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ‘চিনির ভাণ্ড’ হয়ে ওঠার ভারতীয় স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। বিশ শতিকার দ্বিতীয়ার্ধে রপ্তানীনির্ভর চিনিশিল্প আবার বিকশিত হতে আরম্ভ করে। উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশে চিনি উৎপাদনের জন্য আখ চাষ জমিদার ও বণিক শ্রেণির অধীনে চাষীদের দূরবস্থার বৃদ্ধি ঘটায় ও সামন্তীয় শ্রেণি সম্পর্কের ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করে, কিন্তু নতুন বাজার ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অবিসি জাঠ জমি-মালিক তথা চাষীরা প্রভূত উন্নতি সাধন করে। জাত-বর্ণে বিভাজিত ভারতীয় সমাজে জমির মালিকানা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা উচ্চবর্ণ হিন্দুদের করায়ত্ত থাকলেও তারা নিজেরা জমির চাষ করে না, অন্যদিকে অবিসি জমির মালিকরা নিজেরাই সরাসরি চাষাবাদের সাথে যুক্ত। ফলে বাণিজ্যিক আখ চাষের মাধ্যমে পশ্চিম উত্তর প্রদেশে শ্রেণি সম্পর্কের অনেকখানি পরিবর্তন ঘটায়। ১৮৭০ সালের মধ্যেই চামার বাঁধা-শ্রমিকরা নিজেদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে তাদের নিজেদের গ্রামে বা বাইরে কার খামারে কাজ করবে তা তারা নিজেরা নির্ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। ১৮৮২ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী চামার সম্প্রদায়ের শ্রমিকরা পূর্ণ হাজিরা দাবি করতে শুরু করে। কৃষি কাঠামোর এই পরিবর্তনই আরও বিকশিত হয়ে মণ্ডল ও দলিত রাজনীতির ভিত্তি তৈরি করে এবং কৃষির এই শিল্পায়ন মুসলিম-জাঠ ঐক্যেরও ভিত্তি হিসেবে এতাবৎ কাজ করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় বাধ সাধে এই শতকের আশির দশক থেকে চালু নতুন আর্থিক নীতি ও তথাকথিত বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া।

অবাধ বাণিজ্য নীতি ও সুগার ইণ্ডাস্ট্রি
        স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায়ে চিনির উৎপাদনের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। পরিকল্পনা পর্যায়ে চিনিকলের সংখ্যা ও চিনির উৎপাদনের পরিমাণ ১৯৫১-৫৬ সালে ১৩৮ ও ১৯.৩৪ লাখ টন থেকে বেড়ে ২০০৩-০৪ সালে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৬১ ও ১৭০ লাখ টন। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আইন, ১৯৫৫ অনুসারে চিনি উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। কিন্তু বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার উদার আর্থিক নীতির অঙ্গ হিসেবে ১৯৯৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত সরকার চিনি শিল্পকে লাইসেন্স-মুক্ত করে দেওয়ার প্রক্রিয়া জারি করে। রপ্তানীর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কিন্তু রপ্তানী বাস্তবে ২০০১-০২ সালে ১৩৬০ মেট্রিক টন থেকে ২০০৪-০৫ সালে কমে দাঁড়ায় মাত্র ২০ মেট্রিক টন এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক লবির চাপে এই একই পর্যায়ে আমদানী ৪৩৮ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০০ মেট্রিক টনে। এবছরের জানুয়ারী পর্যন্ত ৬.২৬ মেট্রিক টন আমদানী হয়েছে এবং আরও ১.৯ লাখ মেট্রিক টন বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। ভারতবর্ষের সব অঞ্চলের চিনি উৎপাদকদের মালিক-সংস্থা আমদানী শুল্ক বৃদ্ধি করে চিনি আমদানী কমিয়ে আনার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে। সরকার লেভি-সেলের মাধ্যমে রেশনে কম দামে চিনি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ চিনি দেশীয় চিনি উৎপাদকদের থেকে সংগ্রহ করে বাকী চিনি খোলা বাজারে বিক্রয় করার সুবিধা করে দিতে আমদানী কমিয়ে আনতে পারত। কিন্তু ২০০১ সালের মধ্যেই ভারত সরকার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা নির্দেশিত কৃষি নীতিতে সম্পূর্ণ যুক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে অবাধ বাণিজ্য নীতি থেকে সরে আসতে পারছে না। রঙ্গরাজন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরও শিথিল করার তোড়জোড় চলছে। এই কমিটির রেভিন্যু শেয়ারিং ফর্মুলা চাষীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তাতে কৃষিপণ্যের বাজারদর আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রিত যোগান-চাহিদার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এই নীতি আসলে পরিচালিত হচ্ছে কারগিল, জামিকভ, উইলমার, মিত্রাপল ইত্যাদি বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থাকে ভারতীয় চিনি বাণিজ্যে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে।

প্রতিক্রিয়াশীল প্রত্যাঘাত
          বিশ্বায়নের অঙ্গ হিসেবে নতুন বাণিজ্য নীতির ফলে চিনি শিল্পে দেখা দেওয়া সংকটের অজুহাতে উত্তরপ্রদেশের আখ চাষিদের প্রদেয় ৩০০০ কোটি বকেয়া দিচ্ছে না মিলমালিকরা। ২০১১-১২ সালের ১৮,২০০ কোটি টাকার তুলনায় ২০১২-১৩ সালে ২২,৪৬২ কোটি টাকার আখ কিনেছে উত্তরপ্রদেশের মিলমালিকরা। ইতিমধ্যে ৮ টি মিলের মালিকরা ২০১৩-১৪ সালে মিল না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুসলিম শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক উচ্ছেদের ফলে তাদের মধ্যে যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে তাতে যদি তারা ত্রাণ শিবির থেকে অতি-সত্বর নিজ গ্রামে ফেরত যেতে না চায় তাহলে তা মিল-মালিকদের কাছে কার্যত আশীর্বাদ হিসেবেই বিবেচিত হবে, কারণ এক্ষেত্রে গোদামের চিনির স্টক খালি করার জন্য মিল বন্ধ রাখতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। আর যদি এই উদ্বাস্তুরা নিজ গ্রামে ফিরেও আসে, তাহলেও ন্যায্য মজুরি প্রদানের জন্য একজোট হওয়ার সাহস পাবে না। অন্যদিকে শ্রমজীবী মানুষের অনৈক্যের জন্য ছোট ও মাঝারি জাঠ চাষিরাও আখের ন্যায্য মূল্যের জন্য লড়ার বস্তুগত ও মানসিক সাহস সঞ্চয় করতে পারবে না। এমতাবস্থায় বৃহৎ জমি মালিকরা নতুন পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাণিজ্যিক চাষের চেয়ে ‘অ্যাবসল্যুট গ্রাউন্ড রেন্ট’ বা জমির খাজনার মাধ্যমে সুনিশ্চিত আয়ের জন্য সামন্তীয় সম্পর্কের দিকে পশ্চাদগমন করাকেই শ্রেয় মনে করবে এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই খাপ-পঞ্চায়েতের মত পশ্চাদগামী শক্তিগুলো পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠার এক যোগসূত্র পাওয়া যায়। বৃহৎ বহুজাতিক বাণিজ্যিক বেপারি ও খাজনা বা সুদি ও ফাটকা লগ্নিকারী বৃহৎ পুঁজির জন্য এই পরিস্থিতিই সবচাইতে লাভজনক। আখচাষ, চিনি উৎপাদন ও বাণিজ্যে এই প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চাদগামী শক্তির এই নতুন সমীকরণ গড়ে উঠার জন্যই প্রয়োজন ছিল মুসলিম শ্রমিক ও জাঠ আখচাষিদের ঐক্য ভেঙে দেওয়া, যাতে অত্যন্ত কম মজুরিতে শ্রমিক খাটিয়ে আখচাষ ও চিনিকলের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে দেওয়া যায়। শ্রমজীবী মানুষের প্রগতিশীল ঐক্য বিরোধী এই শক্তিই মুজফফরনগরের সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মুল চালিকাশক্তি, যে সংঘাত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানিকভাবে চালিকাশক্তির এই সফলতা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাই হচ্ছে আজকের গণতন্ত্রের প্রধান বিপদ। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারাই এই পশ্চাদগামী শক্তির সুযোগ্য বাহক হবে যারা উদারবাদী আর্থিক নীতিকে জোরেসোরে এগিয়ে নিতে চাইবে এবং শ্রমজীবী মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধির উপযোগী আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার নীতি একে একে বাতিল করতে উদ্যত হবে।

ক্ষমতায়ন ও নতুন বিকল্প
          বিশ্বায়নের উদারবাদী অর্থনীতি ও শ্রমজীবী মানুষেরর টানাপোড়েনের মধ্যেই কিছু কিছু পদক্ষেপ শ্রমজীবী মানুষের প্রশ্বাস নেওয়ার খোলা জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে। এনরেগা, খাদ্য সুরক্ষা, বীমা প্রকল্প ইত্যাদি এধরনেরই যৎসামান্য কিছু স্বস্তির জায়গা। এই প্রকল্পগুলি যদি বাস্তবে রূপায়ণ হয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর প্রকৃত হিতাধিকারীদের মধ্যে পৌঁছে এবং রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের মত বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশগুলি কার্যকরী করে জনগোষ্ঠীগত বঞ্চনার খানিকটা অবসান করা হয় তাহলে উদার-আর্থিক নীতির প্রবক্তাদের ক্ষোভিত করলেও শ্রমজীবী মানুষরা কিছুটা বস্তুগত ও মানসিক শক্তি সঞ্চয় করবে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতির করাল থাবা গোটা পরিস্থিতিকে যেভাবে গ্রাস করছে তাতে বর্তমান জনগোষ্ঠীগত নেতৃত্বকে দিয়ে এই কাজটুকুও হবে কিনা তা সন্দেহের আবর্তে।

         কিন্তু আমাদের একথা মনে রাখতে হবে যে এই উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো রূপায়ণ হলেও শক্তির ভারসাম্য থেকে যাবে প্রতিক্রিয়াশীলদের পক্ষে। রাষ্ট্র, রাজনীতি ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন গণতান্ত্রিক ভারসাম্য গড়ে তুলতে আমাদের যেতে হবে এমন এক নতুন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যা নতুন তত্ত্বায়নের সূত্রপাত ঘটায়, উল্টোদিকে আমাদের যেতে হবে এমন এক নতুন তত্ত্বের মধ্য দিয়ে যা নতুন অনুশীলনের জন্ম দেয় যেখানে গোটা শ্রমজীবী শ্রেণি নীতি নির্ধারণের বিতর্কে অংশ নিতে শুরু করে এবং তা এক স্বীকৃত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করে।   

স্বাভিমান:SWABHIMAN Headline Animator

^ Back to Top-উপরে ফিরে আসুন